রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

আত্মহত্যা রোধে ইসলাম

মাওলানা কামরুল ইসলাম বিন কাসেম:
১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। বিশ্বে আত্মহত্যা প্রতিরোধে ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক আত্মহত্যা প্রতিরোধ সংস্থা দিবসটি পালন করে আসছে। দিবসটি পালনের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে সংস্থাটির সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একসঙ্গে কাজ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর ২০টি কারণের অন্যতম হলো আত্মহত্যা। বছরে প্রায় আট লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। যা মানবতার জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যার অন্যতম কারণগুলো হলো মানসিক হতাশা ও বিষণœতা, দাম্পত্যজীবনে কলহ কিংবা যেকোনো সম্পর্কে অনৈক্য, দারিদ্র্য, লজ্জা, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা ও পারিপার্শ্বিক নানা অসহযোগিতা।

বাংলাদেশেও আত্মহত্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আত্মহত্যার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এর অন্যতম মান-অভিমান। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে, প্রেমঘটিত কারণ ও পারিবারিক কলহ ইত্যাদি। পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ শুধু ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।

ইসলামে হতাশাবাদের কোনো স্থান নেই। জীবনের প্রতি নিরাশ হওয়া এবং নিজের প্রাণকে সংহার করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ইসলাম কখনো আত্মহত্যার মতো কোনো অপরাধ সমর্থন করে না। এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকার গুরুত্ব প্রদান করে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ -সুরা নিসা : ২৯

কোরআন মাজিদে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৯৫

অনেকেই কোনো কাজে ব্যর্থ হয়ে আল্লাহর ওপর ভরসা না করে হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেন। অথচ পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন বিপদ-আপদের সম্মুখীন হলে কর্তব্য কী হবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ -সুরা বাকারা : ১৫৩

আত্মহত্যার পরিণতি মারাত্মক। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদিসে এ বিষয়ে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। আত্মহত্যাকারীর শাস্তি এবং এর পরিণাম সম্পর্কে যদি কেউ যথাযথভাবে অবহিত থাকে তবে আল্লাহর কাছে আত্মহত্যা থেকে অবশ্যই সে পানাহ চাইবে, এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকবে। এমনকি এহেন কর্মের প্রতি অন্তরে ঘৃণা জন্মাবে।

আত্মহত্যার শাস্তির ধরন সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) নিজেকে ফাঁস লাগাতে থাকবে আর যে ব্যক্তি বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে (অনুরূপভাবে) বর্শা বিদ্ধ হতে থাকবে।’ -সহিহ বোখারি

আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে; চিরকাল সে জাহান্নামের ভেতরে এভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে লোক বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোক লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনের ভেতর সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।’

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো আত্মহত্যাকারীর জানাজা পড়েননি। হাদিসে এসেছে, হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এক ব্যক্তির লাশ উপস্থিত করা হলো। সে চ্যাপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জানাজা আদায় করেননি।’ -সহিহ মুসলিম

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এটি প্রমাণিত যে, আত্মহত্যা মারাত্মক অপরাধ ও হারাম। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ। ইসলামি স্কলারদের অভিমত, হতাশা কিংবা যেকোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে নিমিষেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীলতার মাধ্যমে জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য ও মেধা খাটিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এটাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ।

মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়, আবেগতাড়িত হয়ে নিজের ভুলে জীবনকে চিরতরে নিঃশেষ করে দেওয়া মারাত্মক ভুল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং ধৈর্যধারণ করতে হবে। সব ধরনের দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট এবং ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ পাঠ, জিকির ও ইস্তিগফার করতে হবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION